
কক্সবাজার-৪ (উখিয়া-টেকনাফ) আসনে বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে কয়েক সপ্তাহ ধরেই রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তাপ বিরাজ করছিল। অবশেষে গুলশানস্থ বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মনোনয়ন যাচাই বৈঠকে চার সম্ভাব্য প্রার্থীর রাজনৈতিক যোগ্যতা, জনপ্রিয়তা ও সাংগঠনিক ভূমিকা যাচাই-বাছাই করা হয়েছে।
রোববার বৈঠকে অংশ নেন- জেলা বিএনপির সভাপতি, সাবেক এমপি ও হুইপ শাহজাহান চৌধুরী, উখিয়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান সরওয়ার জাহান চৌধুরী, জেলা বিএনপির অর্থ সম্পাদক মোহাম্মদ আবদুল্লাহ, এবং সুপ্রিম কোর্টের সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন। কেন্দ্রীয় নেতারা তাদের বক্তব্য শোনেন এবং নির্বাচনী এলাকা, সাংগঠনিক দক্ষতা ও মাঠপর্যায়ের জনপ্রিয়তা নিয়ে বিস্তারিত প্রশ্ন করেন।
বৈঠকে বিএনপির শীর্ষস্থানীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন, আর যুক্তরাজ্য থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান প্রত্যাশীদের বক্তব্য শোনেন ও মতামত দেন।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম বিভাগের ১৬টি সংসদীয় আসনের প্রায় ৪৫ জন মনোনয়নপ্রত্যাশী এদিন সাক্ষাৎকার দেন। এর মধ্যে আলোচনার কেন্দ্রে ছিল কক্সবাজার-৪ আসন। রোহিঙ্গা সংকট, সীমান্ত নিরাপত্তা, মানবপাচার ও ইয়াবা ইস্যুসহ বহির্বিশ্বের দৃষ্টির কারণে এ আসনের গুরুত্ব এবার অনেক বেশি।
উখিয়া ও টেকনাফে বৈঠককে ঘিরে স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে উত্তেজনা, আশা ও কৌতূহল ছড়িয়ে পড়ে। কেউ ঢাকায় গিয়েছিলেন, কেউবা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণা চালিয়েছেন। বৈঠক শেষে যাদের মূল্যায়ন ইতিবাচক পাওয়া গেছে, তাদের নাম এখন স্থায়ী কমিটির টেবিলে। সেখান থেকেই চূড়ান্ত মনোনয়ন ঘোষণা হবে বলে জানা গেছে।
এদিকে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় ছিলেন সরওয়ার জাহান চৌধুরী। অনেকে মনে করছেন কখনও দলীয় মনোনয়নপত্র না নিলেও এবং অতীতে প্রার্থী হিসেবে আগ্রহ প্রকাশ না করলেও, কেন্দ্রীয় হাইকমান্ডের বিশেষ সিদ্ধান্তে হঠাৎ মনোনয়ন বোর্ডে তার ডাক পড়ায় সবাইকে চমকে দিয়েছেন তিনি।
জানা গেছে- রাজনৈতিক জীবনে দীর্ঘ দুই দশকের বেশি সময় ধরে সরওয়ার জাহান চৌধুরী বিএনপির তৃণমূল থেকে উঠে আসা এক লড়াকু ও নির্যাতিত নেতা হিসেবে পরিচিত। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জনের পর ১৯৯৮ সালে উখিয়া উপজেলা বিএনপির সদস্য হিসেবে তার রাজনীতিতে হাতেখড়ি। এরপর পর্যায়ক্রমে ২০০৪ সালে সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক, ২০০৯ সালে যুগ্ম আহ্বায়ক ও সাধারণ সম্পাদক এবং ২০১৬ সাল থেকে টানা চারবার সভাপতি নির্বাচিত হয়ে নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন।
২০১৪ সালের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে তিনি তৎকালীন ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী শাহীন বদির ভাই হুমায়ূন কবির চৌধুরীকে বিপুল ব্যবধানে পরাজিত করে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। যদিও পরবর্তীতে রাজনৈতিক মামলায় অভিযুক্ত করে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়- যা তখন জেলা জুড়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে।
অনেকে মনে করছেন- দীর্ঘ আন্দোলন, মামলা, নির্যাতন ও সাংগঠনিক দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতা এখন সরওয়ার জাহান চৌধুরীকে উখিয়া-টেকনাফের রাজনীতিতে দৃঢ় অবস্থানে নিয়ে এসেছে। মনোনয়ন বৈঠক শেষে স্থানীয় নেতাকর্মীদের একটি অংশ মনে করছেন, এবার হয়তো লড়াকু এক নেতাকে সামনে আনবে দল।
চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এখন কেন্দ্রে। তবে বৈঠকের পর উখিয়া-টেকনাফে বিএনপির রাজনীতিতে যে নতুন উন্মাদনা তৈরি হয়েছে, তা আসন্ন নির্বাচনের আগাম ইঙ্গিত দিচ্ছে- এই আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে হাড্ডাহাড্ডি।

পাঠকের মতামত